'ধর্মানুভূতিতে আঘাত', তাই ইংল্যান্ডের এক স্কুলে নিষিদ্ধ হলো ‘কে-পপ ডিমন হান্টার্স’-এর গান
'ধর্মানুভূতিতে আঘাত', তাই ইংল্যান্ডের এক স্কুলে নিষিদ্ধ হলো ‘কে-পপ ডিমন হান্টার্স’-এর গান
স্কুলের পাঠানো প্রথম বার্তায় অভিভাবকদের অনুরোধ করা হয়েছিল, তারা যেন তাদের সন্তানদের স্কুলে এই গানগুলো গাইতে বারণ করেন, ‘যাদের বিশ্বাসের সাথে এই বিষয়গুলো মেলে না, তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে।’
নেটফ্লিক্সের সাড়া জাগানো এনিমেটেড চলচ্চিত্র ‘কে-পপ ডিমন হান্টার্স’-এর গান গাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে একটি স্কুল। স্কুল কর্তৃপক্ষের মতে, এই গানগুলো তাদের ‘খ্রিস্ট ধর্মীয় চেতনার’ সাথে সংগতিপূর্ণ নয়।
ইংল্যান্ডের ডরসেটের পুল শহরের ‘লিলিপুট চার্চ অফ ইংল্যান্ড ইনফ্যান্ট স্কুল’ শুক্রবার অভিভাবকদের কাছে একটি বার্তা পাঠায়। সেখানে বলা হয়, স্কুলের কিছু অভিভাবক ও সদস্য গানের মধ্যে ‘ডিমন’ বা ভূত-প্রেতের উল্লেখে ‘গভীরভাবে অস্বস্তিতে ভুগছেন’।
বার্তায় আরও বলা হয়, এর কারণ হলো তারা ‘ডিমন বা ভূত-প্রেতকে ঈশ্বর ও ভালোর বিরোধী অশুভ শক্তি’ হিসেবে দেখে থাকেন।
তবে সোমবার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লয়েড অ্যালিংটন একটি নতুন বার্তায় জানান, তিনি অন্যান্য অভিভাবকদের কাছ থেকেও মতামত পেয়েছেন। তারা গানগুলোর ইতিবাচক দিক, যেমন—সাহস ও দয়া শেখানোর কথা তুলে ধরেছেন। কিন্তু শিক্ষক বলেন, স্কুলের উদ্দেশ্য হলো সেই সমস্ত ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সমর্থন করা, যাদের কাছে এই বিষয়গুলো অস্বস্তিকর মনে হয়।
উল্লেখ্য, ‘কে-পপ ডিমন হান্টার্স’ গত আগস্ট মাসে নেটফ্লিক্সের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে। এর গল্পে ‘হান্টার/এক্স’ নামের একটি কাল্পনিক কে-পপ গার্ল ব্যান্ডের তিন সদস্য তাদের গান এবং মার্শাল আর্টের মাধ্যমে মানুষকে ডিমন বা ভূত-প্রেতের হাত থেকে রক্ষা করে।
এখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ‘সাজা বয়েজ’ নামের পাঁচজন ডিমন বা অশুভ শক্তির একটি ব্যান্ডও রয়েছে, যাদের গানের কথায় প্রলোভন এবং প্ররোচনার মতো বিষয়গুলো উঠে আসে।
স্কুলের পাঠানো প্রথম বার্তায় অভিভাবকদের অনুরোধ করা হয়েছিল, তারা যেন তাদের সন্তানদের স্কুলে এই গানগুলো গাইতে বারণ করেন, ‘যাদের বিশ্বাসের সাথে এই বিষয়গুলো মেলে না, তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে।’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিভাবকদের বলেছিলেন যে ভূতের উল্লেখ খ্রিস্টানদের কাছে গভীর অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। ছবি : সংগৃহীত
কিন্তু একজন অভিভাবক বিবিসিকে বলেন, ‘আমার কাছে এটাকে হাস্যকর মনে হয়েছে। আমার মেয়ে কে-পপ খুব ভালোবাসে এবং সে ও তার বন্ধুরা সবাই এই গানগুলো পছন্দ করে।’
তিনি জানান, বাচ্চারা স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই গানগুলোর সাথে পারফর্মও করত।
তিনি আরও বলেন, ‘এটা বাচ্চাদের জন্য একটা নিরীহ, সুন্দর ব্যাপার, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে।’
এছাড়াও তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, এটা এক ধরনের চাপিয়ে দেওয়া এবং সম্ভবত কিছুটা অন্যায্য ও বোকামি।’ তিনি বলেন, স্কুলে এর আগে এমন কিছু ঘটেনি এবং কোনো চাপের মুখেই স্কুল কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
সোমবারের নতুন বার্তায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অ্যালিংটন জানান, অনেক অভিভাবক তাকে জানিয়েছেন যে ‘গোল্ডেন’-এর মতো গানগুলো (যা একটানা ১০ সপ্তাহ ধরে ইউকে চার্টে এক নম্বরে ছিল) তাদের সন্তানদের দলীয় কাজ, সাহস ও দয়া সম্পর্কে শিখতে সাহায্য করেছে।
তিনি বলেন, ‘আপনার সন্তান বাড়িতে কোন ধরনের সিনেমা বা গান দেখবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারকে আমরা পুরোপুরি সম্মান করি। কিন্তু একই সাথে আমরা আমাদের স্কুল কমিউনিটির বিভিন্ন বিশ্বাসের প্রতিও সচেতন থাকতে চাই।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘কিছু খ্রিস্টানের জন্য, ‘ডিমন’ বা ভূত-প্রেতের উল্লেখ গভীরভাবে অস্বস্তিকর হতে পারে, কারণ তারা এগুলোকে ঈশ্বর ও ভালোর বিরোধী অশুভ শক্তি হিসেবে দেখে।’
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমরা অভিভাবকদের বলছি না যে, আপনারা বাচ্চাদের বলুন এই সিনেমা বা গান উপভোগ করা ভুল। আমাদের কাজ হবে শুধু এটুকুই যে, আমরা শিশুদের বুঝতে সাহায্য করব যে তাদের কিছু সহপাঠীর ভিন্ন বিশ্বাস থাকতে পারে এবং কীভাবে আমরা সেই সহপাঠীদের বিশ্বাসকে সম্মান ও সমর্থন করতে পারি।’