সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য স্বচ্ছ দৃষ্টি: চোখের যত্নে নতুন প্রযুক্তি

মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের সঙ্গে চোখের স্বাস্থ্যের সম্পর্কও উঠে আসছে রোহতোর ‘ফিউচার আই কেয়ার স্টেশন’-এ। সেখানে স্বাস্থ্য রেকর্ড ও ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা জানতে পারছেন তাদের ‘চোখের বয়স’। চোখের ক্লান্তি, পাওয়ার এবং চোখের নড়াচড়া দেখে মাপা হচ্ছে মস্তিষ্কের অবস্থাও।

image
ছবি : সংগৃহীত

২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষই ‘মায়োপিয়া’ বা ক্ষীণদৃষ্টির সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে—গবেষকরা দিচ্ছেন এমনই এক আশঙ্কার বার্তা। সহজ কথায়, দূরের জিনিস দেখা তখন তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কিছু গবেষণা বলছে, এই সমস্যা ভবিষ্যতে গ্লুকোমা আর চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

চোখের সমস্যা হু হু করে বাড়ছে, অথচ বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যের তালিকায় এটি এখনো যেন অবহেলিত। এর মাশুল শুধু ব্যক্তিকেই গুনতে হচ্ছে না, বড় ধাক্কা খাচ্ছে অর্থনীতিও। চোখের সমস্যার সমাধান না হওয়ায় প্রতি বছর বিশ্বের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১৭৩ বিলিয়ন ডলার।

ঠিক এই জায়গাতেই চোখের স্বাস্থ্যের গল্পটি নতুন করে সাজাচ্ছে ‘রোহতো ফার্মাসিউটিক্যাল’। ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই খাতে কাজ করে চলেছে তারা। সেই ১৯০৯ সালে তারা বাজারে এনেছিল প্রথম আই ড্রপ। আজও তাদের আই কেয়ার বা চোখের যত্ন বিভাগের ৮০ শতাংশ বিক্রি আসছে এই আই ড্রপ থেকেই। তবে তারা কি শুধু আই ড্রপেই থেমে আছে? একদমই না।

সাধারণ ওষুধ, স্কিনকেয়ার এবং ফাংশনাল ফুড বা বিশেষ খাবারও তৈরি করছে তারা। ঋতু বদলের অ্যালার্জি থেকে শুরু করে বয়স্ক চোখের যত্ন—সবই থাকছে তাদের তালিকায়। আধুনিক জীবনে ডিজিটাল স্ক্রিন চোখের ওপর যে বাড়তি চাপ ফেলছে, তা কমাতেও নিরলস কাজ করছে তারা। মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে, তাই রোহতো চাইছে বিশ্বের মানুষের সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে।

চোখের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবনা

২০২০ সালের হিসাব বলছে, বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ চোখের সমস্যায় ভুগলেও তারা কোনো চিকিৎসাই নিচ্ছে না। শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই সংখ্যা ১৮০ কোটিতে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসও এর জন্য কম দায়ী নয়। ডিজিটাল ডিভাইসের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ডেকে আনছে চোখের চাপ, শুষ্কতা, ঝাপসা দৃষ্টি আর মাথাব্যথা। যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই জানাচ্ছেন, তারা ডিজিটাল আই স্ট্রেন বা চোখের চাপে ভুগছেন।

গত তিন দশকে মায়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টির হার বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। বর্তমানে বিশ্বের প্রতি তিনজন শিশু ও কিশোরের মধ্যে একজন এই সমস্যায় আক্রান্ত। ছোট শিশুদের চোখের সমস্যা ধরা না পড়লে তাদের লেখাপড়া ও মেলামেশায় প্রভাব পড়ছে, যা কমিয়ে দিচ্ছে তাদের শেখার ক্ষমতা।

বয়স্কদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি কম নয়। বয়সজনিত চোখের সমস্যায় (ম্যাকুলার ডিজেনারেশন) বিশ্বজুড়ে ২০ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত। ২০৪০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৩০ কোটিতে পৌঁছাবে। গবেষণায় উঠে আসছে, দৃষ্টিশক্তির সমস্যার সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার যোগসূত্র থাকতে পারে। নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করলে স্মৃতিভ্রম বা ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি আগে থেকেই বোঝা সম্ভব হচ্ছে।

ভবিষ্যতের প্রযুক্তি

জাপানের শীর্ষ আই ড্রপ ব্র্যান্ড হিসেবে রোহতো ফার্মাসিউটিক্যাল ধরে রেখেছে ৪০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার। তবে আই ড্রপের গণ্ডি পেরিয়ে তারা এখন ঝুঁকছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যের দিকে। সমস্যা হওয়ার আগেই যাতে চোখের যত্ন নেওয়া যায় এবং দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করা যায়, সে জন্য তারা নিয়ে আসছে নতুন প্রযুক্তি ও ব্যক্তিগত সমাধান।

ওসাকা হেলথকেয়ার প্যাভিলিয়নে এক্সপো ২০২৫ চলাকালে রোহতো প্রদর্শন করছে তাদের তাক লাগানো সব নতুন উদ্ভাবন। এর মধ্যে থাকছে কুয়াশার মতো স্প্রে করা যায় এমন আই ড্রপ ডিসপেন্সার, যা ব্যবহার করা খুবই সহজ। পাশাপাশি যার যার প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টমাইজড বা বিশেষ ড্রপ তৈরির ব্যবস্থাও তারা দেখাচ্ছে সেখানে।

মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের সঙ্গে চোখের স্বাস্থ্যের সম্পর্কও উঠে আসছে রোহতোর ‘ফিউচার আই কেয়ার স্টেশন’-এ। সেখানে স্বাস্থ্য রেকর্ড ও ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা জানতে পারছেন তাদের ‘চোখের বয়স’। চোখের ক্লান্তি, পাওয়ার এবং চোখের নড়াচড়া দেখে মাপা হচ্ছে মস্তিষ্কের অবস্থাও।

এছাড়া দেখানো হচ্ছে অভিনব ডিজিটাল ও ভিআর (ভার্চুয়াল রিয়েলিটি) ডিভাইস। এটি চোখের নড়াচড়া দেখে মানসিক চাপ মাপে এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। শিশুদের অলস চোখ বা অ্যাম্পলিয়োপিয়া চিকিৎসায় ভিআর থেরাপি এবং মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষিত করে দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে নিউরোফিডব্যাক টুলের মতো প্রযুক্তির সম্ভাবনার কথাও তারা তুলে ধরছে।

নতুন সম্ভাবনার পথে

রোহতো এখন আর শুধু চোখের চিকিৎসায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। তারা কাজ করে চলেছে রিজেনারেটিভ মেডিসিন বা পুনরুৎপাদনশীল চিকিৎসা নিয়েও। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে কোষ বা সেল নিয়ে তাদের গবেষণা। ২০২৪ সালে এই গবেষণা পেয়েছে নতুন গতি, চালু করা হয়েছে একটি বিশেষ ল্যাবও।

এক্সপোতে তারা দেখাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত এমন একটি যন্ত্র যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোষ তৈরি করতে পারে। তাদের লক্ষ্য—জয়েন্টের ব্যথা, ত্বক এবং চুলের চিকিৎসায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা।

ভবিষ্যতের এই চিকিৎসার চিত্র আঁকছেন উয়েমুরা নামের এক কর্মকর্তা। তিনি বলছেন, ‘ভাবুন তো এমন এক সময়ের কথা, যখন আপনি অফিসে যাওয়ার পথে ক্লিনিকে গিয়ে কোষ জমা দিলেন, আর ফেরার পথে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।’

চোখের স্বাস্থ্যের ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে প্রতিরোধ, সহজলভ্যতা এবং উদ্ভাবনের ওপর। রোহতো কাজে লাগাচ্ছে তাদের শত বছরের অভিজ্ঞতা আর আধুনিক গবেষণাকে। তাদের লক্ষ্য একটাই—আগামী প্রজন্মের জন্য স্বচ্ছ ও সুন্দর দৃষ্টি নিশ্চিত করা।