ঢাকায় প্রতি ২৮ জনের জন্য রয়েছে মাত্র একটি গাছ

বন অধিদপ্তরের উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. জাহিদুল কবির বলেন, ‘আর মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ডে জীববৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চোরা শিকার, বনভূমি দখল, আগুন, অবৈধভাবে নির্মাণ, ম্যানগ্রোভ বিনষ্টকরণ ও অনিয়ন্ত্রিত নৌযান চলাচলের কারণে বন ও বন্যপ্রাণী ক্রমাগত হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের চাপও এসব বনকে নাজুক করে তুলছে।’

osmani_udyan_dhaka_park_3
ছবি: টিবিএস

একজন মানুষের অক্সিজেন সরবরাহের জন্য তিনটি পূর্ণবয়স্ক গাছের প্রয়োজন। অথচ ঢাকায় ২৮ জন মানুষের জন্য রয়েছে একটি গাছ, যা পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্যের তুলনায় অনেকগুণ কম।

রবিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত চার দিনব্যাপী ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’- শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপকালে বন অধিদপ্তরের উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. জাহিদুল কবির এসব তথ্য জানিয়েছেন।

জাহিদুল কবির বলেন, ‘প্রতিদিন একজন মানুষের কমপক্ষে ৫৫০ লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন। আর এই অক্সিজেন সরবরাহ করতে কমপক্ষে তিনটি পূর্ণবয়স্ক গাছ লাগে। কিন্তু ঢাকায় বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে ২৮ জন মানুষের জন্য মাত্র একটি গাছ রয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশে প্রায় আড়াই লাখ একর বন দখল হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘আর মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ডে জীববৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চোরা শিকার, বনভূমি দখল, আগুন, অবৈধভাবে নির্মাণ, ম্যানগ্রোভ বিনষ্টকরণ ও অনিয়ন্ত্রিত নৌযান চলাচলের কারণে বন ও বন্যপ্রাণী ক্রমাগত হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের চাপও এসব বনকে নাজুক করে তুলছে।’

উপপ্রধান বন সংরক্ষক আরও জানান, ‘দেশের বনাঞ্চলে বর্তমানে প্রায় ৩৯৪ মিলিয়ন ঘনফুট কাঠসম্পদ আছে। আর দেশের মোট গাছের আচ্ছাদন অর্থাৎ বনভূমি ও বনভূমির বাইরে থাকা গাছ মিলিয়ে ৯৭৩ মিলিয়ন টন কার্বন ধারণ করছে। এর মধ্যে শুধু বনাঞ্চলেই রয়েছে ২৫১ মিলিয়ন টন কার্বন।’

বন সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যক্তি পর্যায়ে চারা বিতরণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ১৯ হাজার চারা বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। এই উদ্যোগ মানুষকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের কার্বন ধারণ ক্ষমতা বাড়াবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বনায়নই সবচেয়ে কার্যকর ও স্বল্পব্যয়ী প্রাকৃতিক সমাধান। মানুষের আরাম–আয়েশ যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে জ্বালানি ব্যবহার ও কার্বন নিঃসরণ। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশও ভবিষ্যতে শিল্পঘন দেশে পরিণত হলে কার্বন নিঃসরণ আরও বাড়বে। যদিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দূষণকারী শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ রয়েছে যাদের বনায়ন ছাড়াও টিকে থাকা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১২০০ মানুষ বাস করে। অন্যদিকে বিশ্বের মোট বনভূমির প্রায় ২০ শতাংশ রয়েছে রাশিয়ার মতো দেশে, যেখানে জনসংখ্যা ঘনত্ব মাত্র ৯ জন। ফলে বাংলাদেশে বনভূমির চাপ বেশি এবং বননির্ভরতা আরও বেশি।’

বিশ্বের অর্ধেক বনভূমি মাত্র পাঁচটি দেশ রাশিয়া, কানাডা, ব্রাজিল, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেই তুলনায় বাংলাদেশের বন অবস্থান একেবারে তলানিতে। ঢাকা শহরে এক শহরের জন্য ন্যূনতম ২০ শতাংশ সবুজ এলাকার কথা বলা হলেও দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে রয়েছে মাত্র ১০ শতাংশের একটু বেশি।’ 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্টার স্কিল ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী ও গবেষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের উর্বর পরিবেশ ও কৃষিতে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক অসহযোগিতা, মূল্যবোধের সংকট, বণ্টননীতির অভাব এবং সঠিক নেতৃত্বের ঘাটতির কারণে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে সিন্ডিকেট, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, চাঁদাবাজি ও দুর্বল বাস্তবায়নব্যবস্থা কৃষি, বনায়ন ও পরিবেশ উন্নয়নে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।  মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি এবং সুশাসন নিশ্চিত হলে খাদ্যনিরাপত্তা ও পরিবেশ সুরক্ষায় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা সম্ভব।’

সম্মেলনে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু খালিদের সঞ্চালনায় এবং সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন সভাপতিত্ব করেন।

প্রসঙ্গত, ৪ দিনব্যাপী এ সম্মেলনের কো-স্পন্সর আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সহযোগী স্পন্সর হিসেবে রয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, লাল তীর সিডস লিমিটেড, ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন–বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।