ভূমিকম্প: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ হল ছেড়ে কর্মচারীদের ভবনে অবস্থান শিক্ষার্থীদের
ভূমিকম্প: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ হল ছেড়ে কর্মচারীদের ভবনে অবস্থান শিক্ষার্থীদের
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা মৃত্যুকূপে থাকি, আর কর্মচারীদের জন্য আলিশান বিল্ডিং! নিরাপত্তার প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা এখানে এসেছে। এ আবাসিক ভবনে কর্মচারীরা থাকে না, উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ টাকা নিয়ে তারা সাবলেট ভাড়া দেয়।’
ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নতুন ভবনে আবাসন নিশ্চিতের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীদের আবাসিক ভবন ‘স্বাধীনতা টাওয়ারে’ অবস্থান নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, ঝুঁকিপূর্ণ মুহসীন হলে নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতা টাওয়ারে তাদের থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা আবাসিক ভবনটিতে অবস্থান শুরু করে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বেলা ২টা) তারা সেখানে অবস্থান করছিলেন।
স্বাধীনতা টাওয়ার নামের এ আবাসিক ভবনে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
এদিকে মুহসীন হলের একাধিক শিক্ষার্থী এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের হলটির বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই পলেস্তারা খসে পড়ে। সিলিং ফ্যান খুলে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কখনও বড় ধরনের সংস্কার উদ্যোগ নেয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়েই সেখানে থাকতে হয়।
সর্বশেষ শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে লাফিয়ে পড়ে মুহসীন হল সংসদের ভিপি সাদিক শিকদারসহ পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হন। এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আরেক ভূমিকম্পে হলভবন কেঁপে উঠলে আতঙ্কিত হয়ে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছিলেন হলের এক শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচির খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা আলোচনায় অপারগতা জানান।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহরাব হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘আমরা মৃত্যুকূপে থাকি, আর কর্মচারীদের জন্য আলিশান বিল্ডিং! নিরাপত্তার প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা এখানে এসেছে। এ আবাসিক ভবনে কর্মচারীরা থাকে না, উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ টাকা নিয়ে তারা সাবলেট ভাড়া দেয়। আমাদের দাবি, মুহসীন হলের নতুন ভবনের কাজ না হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।’
২০১৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি বিশেষজ্ঞ দল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি হল- মাস্টারদা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও শহীদুল্লাহ হল- পরিদর্শন করে এগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল।
মুহসীন হলের প্রভোস্ট ড. মো. সিরাজুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘বুয়েটের প্রতিবেদনে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে কিন্তু এখনই বসবাসের অনুপযোগী এরকম বলেনি। বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের দ্বারাই এখন হলের মেরামত ও সংস্কার কাজ চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন দুর্ঘটনায় আফটার শকের একটা বিষয় আছে, সেই জায়গা থেকে নিরাপত্তার প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা সেখানে গেছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে আবার কথা বলব। হলের ভবনগুলোকে পরীক্ষা করে শিক্ষার্থীদের জন্য যা ভালো হয় সেই সিদ্ধান্তই নিব।’