fasting
Photo: Courtesy

নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে উপবাস আপনার রক্তচাপ কমাতে পারে, সহায়তা করতে পারে আপনার ওজন হ্রাসে এবং দীর্ঘায়ু উন্নতি করতে পারে।

দিনে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা না খেয়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে পারে। এমনকি এজন্য যদি নিজেকে ক্ষুধা নিবারণের জন্য প্রশিক্ষণও দিতে হয়, তাও ভালো- অন্তত এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকরা।

প্রাচীনকালের প্রাণী এবং মানুষের ওপর করা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে উপবাস আপনার রক্তচাপ কমাতে পারে, সহায়তা করতে পারে আপনার ওজন হ্রাসে এবং দীর্ঘায়ু উন্নতি করতে পারে।

এ ছাড়াও স্থূলত্ব, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের প্রতিরোধ বা চিকিৎসার একটি পদ্ধতি হিসাবেও গবেষণার এই ফলাফলকে বিবেচনা করছেন চিকিৎসকরা।

এই গবেষণার প্রধান গবেষক জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো বিজ্ঞানের অধ্যাপক মার্ক ম্যাটসন দুই ধরনের উপবাসের কথা বলছেন। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় সীমাবদ্ধ খাওয়া (যেমন- দিনে ৬-৮ ঘণ্টা খাওয়া এবং ১৬-১৮ ঘণ্টা উপবাস) এবং ৫:২ মাঝে মাঝে উপবাস (সপ্তাহে দুই দিন- সাধারণত ৫০০ ক্যালোরির উপবাসের দিনটি ক্যাপ করা হয়)।

কিন্তু মানুষ কি উপবাসের এই নতুন ধারণাকে গ্রহণ করছে? পর্যালোচনা অনুসারে বেশিরভাগ আমেরিকানরা দিনে তিনবার খাবারের পাশাপাশি স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার গ্রহণ করেন। ফলে চিকিৎসকরা সমাধান হিসেবে নতুন এই নিয়মের উপবাসকে বিবেচনা করতে পারছেন না।  

গবেষণাটি তুলনামূলকভাবে নতুন হওয়ায়, চিকিৎসকদেরকে তাদের রোগীদের মাঝে উপবাসের এই চর্চা প্রথমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং ধীরে ধীরে উপবাসের সময়কাল ও মাত্রা বাড়িয়ে তাদের পরিবর্তনের নির্দেশনা দেওয়ার পরামর্শ দেন।

কিভাবে এটি কাজ করে

অতিরিক্ত ওজনের কারণে বিভিন্ন রোগে ভুগছেন এমন প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে এই উপবাসের নিয়ম প্রয়োগ করে পরীক্ষা করছেন চিকিৎসকরা। দেখা গেছে, তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে স্বাস্থ্যের এই উন্নতি ওজন হ্রাসের ফলস্বরূপ কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন গবেষকরা। 

উপবাস এবং খাওয়ার মধ্যে এই বিকল্প পদ্ধতি খুব সম্ভবত মানুষের বিপাকীয় স্যুইচিংকে ট্রিগার করে। এতে করে কোষের গঠন উন্নত করে বলে জানান ম্যাটসন। বিপাকীয় স্যুইচিংয়ে, কোষগুলো তাদের মজুদ জ্বালানি ব্যবহার করে এবং জমে থাকা চর্বিকে শক্তিতে রূপান্তর করে। ফলে ফ্যাট-স্টোরিং থেকে ফ্যাট-সেভিংয়ে “একটি স্যুইচ ফ্লিপিং”।

সুবিধাগুলো

ডায়েটের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে প্রাণী এবং মানুষের ওপর বেশ কিছু গবেষণা করে দেখা গেছে, এমন ডায়েটের চর্চা তাদের দীর্ঘায়ু, স্বাস্থ্যকর হৃদপিণ্ডের নিশ্চয়তা দেয়। 

নিবন্ধটি জাপানের ওকিনাওয়ার বাসিন্দাদের দিকে ইঙ্গিত করে, তাদের দীর্ঘায়ু এবং স্বল্প-ক্যালোরি, পুষ্টিকর সমৃদ্ধ ডায়েটের জন্য পরিচিত। তাদের মাঝে মাঝে উপবাস করা তাদের জীবনযাত্রায় অবদান রাখতে এবং স্থূলত্বকে আটকাতে পারে বলে গবেষকরা মনে করেছেন।

মাঝে মাঝে এমন নিয়মতান্ত্রিক উপবাস শরীরে ইনসুলিন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করে। ২০১৮ সালে করা একটি ছোট্ট গবেষণা থেকে প্রাপ্ত অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তিনজন পুরুষ, এরকম নিয়ন্ত্রিত উপবাস থেকে ওজন কমানোর পর তাকে আর ইনসুলিন নিতে হয়নি। তাই ডায়াবেটিস রোগটি নিরাময় করা যায় না- এমন বহুল প্রচলিত বিশ্বাসের সঙ্গেও সংঘাত রয়েছে এমন ফলাফলের।

পূর্ববর্তী একটি গবেষণায় (ম্যাটসন সহ-লেখক) দেখিয়েছিলেন যে বিপাকীয় স্যুইচটি মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায় এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ নিয়মতান্ত্রিক উপবাস আপনার মস্তিষ্কের দক্ষতা বাড়াতে কাজ করবে।

২০০৯ সালে প্রাপ্তবয়স্কদের দুইটি গ্রুপ নিয়ে এক গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এখানে একটি গ্রুপকে  সীমিত ক্যালোরিযুক্ত ডায়েটে রাখা হয় আর অন্য দলটি উপবাস করেননি। দেখা গেল, প্রথম গ্রুপের স্মৃতিশক্তি পরের গ্রুপটির চেয়ে বেশি।

সীমাবদ্ধতা

এই ধরনের নিয়মতান্ত্রিক উপবাসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলোর জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন যা এখনও পাওয়া যায়নি। ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলো অতিরিক্ত ওজনের প্রাপ্তবয়স্কদের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, তাই অন্যান্য বয়সের গ্রুপগুলিতে এর প্রভাব কেমন তা বলা যায় না বলে জানান গবেষকরা। 

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ এর পুষ্টি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. ফ্র্যাঙ্ক হু বলেন, “মানুষের স্বভাব হলো খুব কঠোর পরিশ্রম যেমন ব্যায়াম করা বা দীর্ঘ সময়ের জন্য উপবাসের পর মতো নিজেকে একটু ভালো প্রতিদান দিতে চান। এতে করে উপবাসের পর অস্বাস্থ্যকর ডায়েটের অভ্যাসে লিপ্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।”

মস্তিষ্ক যখন খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয় তখন হাইপোথ্যালামাস থেকে ক্ষুধা হরমোনগুলি নিঃসৃত হয়। ফলে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছাকে ট্রিগার করে।  

তবে ম্যাটসন বলছেন, এই যন্ত্রণা সাময়িক। 

তিনি বলেন, খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রথম দিকে ক্ষুধার্ত এবং খিটখিটে বোধ করবেন রোগীরা। শরীর এবং মস্তিষ্ক নতুন অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে সাধারণত দু’সপ্তাহ থেকে এক মাস সময় লাগে। এরপর এই লাইফস্টাইলে চলতে কষ্ট হবে না আর।