মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণে শরীরে যা ঘটতে পারে
মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণে শরীরে যা ঘটতে পারে
সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে আলোচনায় সবচেয়ে বেশি যে শব্দটি শোনা যায় সেটি হলো প্রোটিন। এর অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে, আমাদের সুস্থ খাদ্যাভ্যাসে প্রোটিন একটি অপরিহার্য উপাদান।
কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের পাশাপাশি প্রোটিন হলো আমাদের খাদ্যের প্রধান ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলোর একটি। তবে প্রোটিনই একমাত্র উপাদান যা শরীরকে অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে। খাবারের প্রোটিন হজম হলে তা অ্যামিনো অ্যাসিডে ভেঙে যায়, যা শরীরের নানা প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। যেমন, পেশি গঠন ও সংরক্ষণ, হরমোন তৈরি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, এমনকি চুল, ত্বক ও নখের স্বাস্থ্য রক্ষা ইত্যাদি।
তবে প্রোটিন নিয়ে কিছু পুষ্টিবিদেরা সতর্ক করেছেন। তারা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন্ডের কারণে অনেকেই প্রোটিন বেশি গ্রহণ করে ফেলছেন।
ওয়েটওয়াচার্সের চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার প্রফেসর ড. মিশেল কার্ডেলের মতে, শরীরের প্রয়োজনের বেশি প্রোটিন খেলে সেটি সঞ্চিত হয় না। শরীর অতিরিক্ত প্রোটিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয় অথবা তা শক্তি বা চর্বিতে রূপান্তরিত হয়।
তিনি আরও জানান, সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে এটি সরাসরি ক্ষতিকর নাও হতে পারে। তবে, শরীরের চাহিদা পূরণ হলে অতিরিক্ত প্রোটিন বাড়তি কোনো উপকার করে না। বরং দীর্ঘায়ু ও সার্বিক সুস্থতার জন্য প্রোটিনের সঙ্গে ফাইবারের সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
মনে রাখা দরকার, অতিরিক্ত প্রোটিন ও ফাইবারের ঘাটতি ওজন বৃদ্ধি বা হজমের সমস্যার কারণ হতে পারে।
ড. ডেভিড লিস্কা বলেন, ‘এ সমস্যার একটি সাধারণ লক্ষণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আরও নানা জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই ফাইবারসমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সাধারণত প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩৫ গ্রাম ফাইবার গ্রহণের পরামর্শ দিই। আর এর সঙ্গে প্রচুর পানি পান করাও গুরুত্বপূর্ণ।’
আমাদের শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৮ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ জরুরি। মার্কিন কৃষি দপ্তর (এইএসডিএ) ও স্বাস্থ্য ও মানবসেবা দপ্তর (এইচএইচএস) যৌথভাবে এই মান নির্ধারণ করেছে। অবশ্য বয়স বা ওজন কমানো-বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রোটিনের পরিমাণ কমবেশি হতে পারে।
প্রোটিন যেমন শক্তি ও পেশি গঠনে ভূমিকা রাখে, তেমনি ফাইবার আমদের হজম ও নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ডায়েটারি ফাইবার দুই ধরনের হয়। দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয়। দ্রবণীয় ফাইবার হজমে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এটি পানি শোষণ করে জেলির মতো পদার্থ তৈরি করে। বার্লি, বাদাম, বীজ, শিমজাতীয় খাবার ও কিছু ফল ও সবজিতে দ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায়।
অন্যদিকে অদ্রবণীয় ফাইবার পানিতে দ্রবীভূত হয় না। এটি মলত্যাগের পরিমাণ ও ঘনত্ব বাড়ায়। গমের ভুসি, শাকসবজি ও বিভিন্ন শস্যজাত খাবারে অদ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায়।
গবেষণা বলছে, প্রোটিন ও ফাইবারের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা শুধু স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখতে নয়, বরং ওজন কমানোর লক্ষ্য পূরণেও সহায়ক হতে পারে।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন ও ফাইবারের সঠিক ভারসাম্য নিশ্চিত করতে ড. মিশেল কার্ডেল একটি বিশেষ নিয়ম অনুসরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণত আমার স্বাস্থ্য নিয়ে ৩০-৩০-৩০ নিয়মে ভাবি। প্রতিটি খাবারে অন্তত ৩০ গ্রাম প্রোটিন, প্রতিদিন অন্তত ৩০ গ্রাম ফাইবার এবং প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক কার্যক্রম। এই নিয়ম আমাকে সুস্থ্য থাকতে সহায়তা করে।’