ছবি তুলতে গিয়ে আবাসস্থল ধ্বংস, হারিয়ে গেল 'জাদুকরী' গ্যালাক্সি ব্যাঙ
ট্র্যাকাররা জানান, বিপন্ন এই প্রজাতিটিকে খুঁজতে ফটোগ্রাফাররা বনের কাঠের গুঁড়ি উল্টে ফেলেছিল। ব্যাঙ পাওয়ার পর তারা খালি হাতেই সেগুলোকে ধরে ছবি তোলে। অথচ এই প্রাণীরা চামড়া দিয়ে শ্বাস নেয় এবং মানুষের স্পর্শে এদের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
ছবি তুলতে গিয়ে আবাসস্থল ধ্বংস, হারিয়ে গেল 'জাদুকরী' গ্যালাক্সি ব্যাঙ
ট্র্যাকাররা জানান, বিপন্ন এই প্রজাতিটিকে খুঁজতে ফটোগ্রাফাররা বনের কাঠের গুঁড়ি উল্টে ফেলেছিল। ব্যাঙ পাওয়ার পর তারা খালি হাতেই সেগুলোকে ধরে ছবি তোলে। অথচ এই প্রাণীরা চামড়া দিয়ে শ্বাস নেয় এবং মানুষের স্পর্শে এদের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
ভারতের কেরালার রেইনফরেস্টে এক জাদুকরী প্রাণী ‘গ্যালাক্সি ব্যাঙ’। আঙুলের ডগার সমান এই বিপন্ন প্রাণীটি এখন নিখোঁজ। ধারণা করা হচ্ছে, তারা আর বেঁচে নেই। অভিযোগ উঠেছে, কিছু ফটোগ্রাফার ভালো ছবি তোলার নেশায় এদের থাকার জায়গা বা তছনছ করে দিয়েছে।
বিজ্ঞানীদের কাছে মেলানোবাট্রাকাস ইন্ডিকাস (Melanobatrachus indicus) নামে পরিচিত এই ব্যাঙটি তার পরিবারের একমাত্র টিকে থাকা সদস্য। জুলজিক্যাল সোসাইটি অফ লন্ডনের গবেষক রাজকুমার কে পি জানান, ভেজা বনের বড় কাঠের গুঁড়ির নিচে এদের বাস। অনেকের ধারণা এদের গায়ের উজ্জ্বল দাগগুলো বিষাক্ত, কিন্তু আসলে সেগুলো একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম।
২০২০ সালের শুরুতে পশ্চিমঘাট বনাঞ্চলে এমন সাতটি ব্যাঙের সন্ধান পেয়েছিলেন রাজকুমার। কিন্তু করোনার কারণে সেখানে আর যাওয়া হয়নি। মহামারি শেষে ফিরে গিয়ে দেখেন, ব্যাঙগুলো উধাও। জেডএসএল-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাঙদের আশ্রয়ের সেই সুন্দর বড় কাঠের গুঁড়িটি ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং আশপাশের গাছপালাও মাড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে।
প্রথমে রাজকুমার ভেবেছিলেন এটি হয়তো বেজির কাজ। কিন্তু এত বড় কাঠ উল্টানো বেজির সাধ্যের বাইরে। পরে তার সঙ্গী বা ট্র্যাকারের মাধ্যমে জানতে পারেন, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কিছু ফটোগ্রাফার সেখানে গিয়েছিল।

ব্যাঙগুলোর আবাস ছিল এমন গাছের গুঁড়ি ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । ছবি: রাজকুমার কে পি/জুলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন
খোঁজ নিয়ে জানা গেল মর্মান্তিক তথ্য। ট্র্যাকাররা জানান, বিপন্ন এই প্রজাতিটিকে খুঁজতে ফটোগ্রাফাররা বনের কাঠের গুঁড়ি উল্টে ফেলেছিল। ব্যাঙ পাওয়ার পর তারা খালি হাতেই সেগুলোকে ধরে ছবি তোলে। অথচ এই প্রাণীরা চামড়া দিয়ে শ্বাস নেয় এবং মানুষের স্পর্শে এদের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ড বা শ্যাওলাধরা কাঠের ওপর বসিয়ে ছবি তোলার জন্য ব্যাঙগুলোকে বারবার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘক্ষণ মানুষের হাতে থাকায় সেদিনই দুটি ছোট ব্যাঙ মারা যায়। সেদিন তারা মোট পাঁচ-ছয়টি ব্যাঙ ধরেছিল।
এরপর মাসের পর মাস খুঁজেও রাজকুমার আর কোনো গ্যালাক্সি ফ্রগ পাননি। এই অন্যায়ের সামনে তিনি নিজেকে বড় অসহায় মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘বন বিভাগের কর্মকর্তারা এসব দল আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ফটোগ্রাফাররা প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ বা উচ্চ আদালতের বিচারকদের নাম ভাঙিয়ে ছবি তোলার অনুমতি নিয়ে নেয়।’

ব্যাঙগুলোর ত্বকের দাগগুলোকে এক ধরনের যোগাযোগের মাধ্যম বলে মনে করা হয়। ছবি: রাজকুমার কে পি/জুলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন
ব্যাঙগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজকুমার বলেন, ‘এদের দেখলেই প্রেমে পড়তে হয়। মনে হয় যেন মিশমিশে কালো রঙের শরীর, কিন্তু আলো ফেললেই দেখা যায় শরীরে হাজারো তারা জ্বলছে—ঠিক যেন আস্ত এক গ্যালাক্সি। এটা সত্যিই জাদুকরী।’
জেডএসএল-এর কিউরেটর ড. বেঞ্জামিন ট্যাপলি বলেন, এই ব্যাঙ পৃথিবীর প্রাণের ইতিহাসের এক প্রাচীন ও অপূরণীয় অংশ। তিনি বলেন, ‘আমি যখনই অনলাইনে কারও ফিডে গ্যালাক্সি ফ্রগের ছবি দেখি, আমার মুখটা যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যায়। আমি ভাবি, কী হয়েছিল তখন? ছবিটা কীভাবে তোলা হলো? ব্যাঙটির বাসস্থানের কী ক্ষতি হলো?’
ড. ট্যাপলি আশা প্রকাশ করেন, মানুষ আরেকটু নীতিবান ও সচেতন হবে, যাতে কোটি বছর ধরে টিকে থাকা এই জাদুকরী প্রজাতিটি হারিয়ে না যায়।