সমুদ্রে সার্ডিন মাছের তীব্র সংকট; অনাহারে ৬০ হাজার আফ্রিকান পেঙ্গুইনের মৃত্যু

গবেষকরা জানান, ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ডাসেন ও রবেন দ্বীপের প্রায় ৯৫ শতাংশ আফ্রিকান পেঙ্গুইন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাদের মতে, সার্ডিন মাছের তীব্র সংকটের কারণে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

7 DEC WEB
ছবি: এপি

দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলে ৬০ হাজারেরও বেশি পেঙ্গুইন খাদ্যের অভাবে মারা গেছে বলে জানা গেছে নতুন এক গবেষণায়। গবেষকদের মতে, সার্ডিন মাছের তীব্র সংকটের কারণে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

গবেষকরা জানান, ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ডাসেন ও রবেন দ্বীপের প্রায় ৯৫ শতাংশ আফ্রিকান পেঙ্গুইন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, পালক বদলানোর মৌসুমে (মোল্টিং) এদের মৃত্যু হয়েছে। বছরে একবার কয়েক সপ্তাহ ধরে পেঙ্গুইনদের পুরোনো পালক ঝরে নতুন পালক গজায়।

পালক বদলানোর এই প্রক্রিয়াটি প্রায় ২১ দিন ধরে চলে। এ সময় পেঙ্গুইনরা পানিতে নামতে পারে না, ফলে শিকারও ধরা সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে ডাঙ্গায় দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হয়।

যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের গবেষক ড. রিচার্ড শার্লি বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবেই পেঙ্গুইনদের শরীর এমনভাবে তৈরি যে পালক বদলানোর আগে তারা প্রচুর খেয়ে শরীরে চর্বি জমিয়ে রাখে। মোল্টিংয়ের দিনগুলোতে না খেয়ে সেই চর্বি আর প্রোটিন খরচ করেই তারা টিকে থাকে।’

কিন্তু সাগরে সার্ডিন মাছ কমে যাওয়ায় পেঙ্গুইনরা পর্যাপ্ত খাবার পায়নি, ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় চর্বি জমেনি। জলবায়ু পরিবর্তন ও অতিরিক্ত মাছ ধরাকেই সার্ডিন মাছ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে। ড. শার্লি জানান, গত তিন দশকে আফ্রিকান পেঙ্গুইনের সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে।

ড. শার্লি বলেন, ‘পালক বদলানোর পর পেঙ্গুইনদের দ্রুত শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনতে হয়। কিন্তু পালক বদলানোর আগে বা পরে যদি পর্যাপ্ত খাবার না পায়, তবে জমানো চর্বিতে তাদের কুলায় না। ফলে না খেয়েই মারা যায় তারা। আমরা সাধারণত উপকূলে এদের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখি না। আমাদের ধারণা, সাগরে থাকার সময়ই এদের মৃত্যু হয়।’

‘অস্ট্রিচ: জার্নাল অব আফ্রিকান অর্নিথলজি’তে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ডাসেন ও রবেন দ্বীপে ৬২ হাজার পেঙ্গুইন মারা গেছে। এর মূল কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ আগুলহাসের পশ্চিমে সার্ডিন মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়া। ওই এলাকায় সার্ডিনের সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ের তুলনায় ২৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে।

অতিরিক্ত মাছ ধরা এর অন্যতম কারণ। এ ছাড়া সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা পরিবর্তনের ফলে সার্ডিন মাছের প্রজননও ব্যাহত হচ্ছে।

আফ্রিকার একমাত্র নিজস্ব পেঙ্গুইন প্রজাতি হলো এই আফ্রিকান পেঙ্গুইন। জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্যের অভাবে আগামী এক দশকের মধ্যে বন্য পরিবেশ থেকে এই প্রজাতিটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এই প্রজাতিকে বাঁচাতে এক অভিনব উপায় বেছে নিয়েছেন গবেষকরা। কংক্রিট দিয়ে তৈরি নকল পেঙ্গুইন (ডিকয়) এবং রেকর্ড করা পেঙ্গুইনের ডাক ব্যবহার করে পেঙ্গুইনদের নিরাপদ ও প্রচুর খাবার আছে—এমন নতুন এলাকায় বাসা বাঁধতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এসব এলাকা মানুষের উপদ্রব ও হিংস্র প্রাণী থেকে মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তবে গবেষকরা মনে করেন, দীর্ঘ মেয়াদে পেঙ্গুইন বাঁচাতে হলে সার্ডিন মাছের সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। ড. শার্লি বলেন, ‘২০২৪ সালে আফ্রিকান পেঙ্গুইনকে ‘অতি বিপন্ন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এদের টিকিয়ে রাখতে হলে খাবারের প্রধান উৎসগুলোতে সার্ডিন মাছের মজুত বাড়াতেই হবে।’