১৯৯৮ সালে ২০২৫ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আমেরিকানরা, মিলল কতটুকু?
১৯৯৮ সালে ২০২৫ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আমেরিকানরা, মিলল কতটুকু?
১৯৯৮ সাল। বিল ক্লিনটন তখন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখোমুখি, বক্স অফিসে অস্কার মাতিয়ে দিচ্ছে কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘টাইটানিক’, আর অধিকাংশ ঘরেই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ল্যান্ডফোন। সেই সময়ে ‘গ্যালাপ’ ও ‘ইউএসএ টুডে’ ল্যান্ডফোনের মাধ্যমে ১,০৫৫ জন আমেরিকানের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। জানতে চেয়েছিল সুদূর ভবিষ্যৎ—অর্থাৎ ২০২৫ সাল নিয়ে তাদের ভাবনা ও ভবিষ্যদ্বাণী।
কানেল ইউনিভার্সিটির রোপার সেন্টারের আর্কাইভে সেই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। ২০২৫ সাল এখন প্রায় শেষের পথে। এই দীর্ঘ ২৭ বছরে তাঁদের সেই ধারণাগুলো কতটা সত্যি হলো, তার একটি চুলচেরা বিশ্লেষণ করা যাক।
নির্ভুল ছিল যেসব ধারণা
১৯৯৮ সালের করা কিছু ভবিষ্যদ্বাণী ছিল আশ্চর্যজনকভাবে নিখুঁত। অধিকাংশ আমেরিকানই ধারণা করেছিলেন যে, পরবর্তী ২৭ বছরের মধ্যে দেশটি একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট পাবে। এ ছাড়া সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধ ও সাধারণ বিষয়ে পরিণত হবে এবং একটি ‘ভয়াবহ নতুন রোগ’ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে বলেও তারা সঠিক ধারণা করেছিলেন।
পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ সহজলভ্য হবে না কিংবা ভিনগ্রহী প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হবে না—তৎকালীন মানুষের এই সংশয়ও বর্তমান বাস্তবতায় সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।

যেখানে মেলেনি হিসাব
সব ভবিষ্যৎবাণী অবশ্য খাটেনি। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান ভেবেছিলেন ২০২৫ সালের মধ্যে দেশটি একজন নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবে। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যান্সারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করতেন যে ২০২৫ সাল নাগাদ ‘মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচবে’। তবে বাস্তবতা হলো, বিজ্ঞান ও চিকিৎসা অনেক দূর এগোলেও পৃথিবী এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি।
জরিপটিতে দেশের ভবিষ্যৎ অভিমুখ নিয়ে বেশ নেতিবাচক বা হতাশাবাদী মনোভাবও ফুটে উঠেছিল। প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ ভেবেছিলেন ধনীদের জীবনমান আরও উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে মতামত ছিল দ্বিধাবিভক্ত। অধিকাংশের আশঙ্কা ছিল দরিদ্রদের অবস্থা আরও শোচনীয় হবে।

প্রায় ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই মনে করেছিলেন ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমে যাবে এবং ৫৭ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সংকুচিত হবে। এ ছাড়া অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটবে বলেও অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন।
জরিপে অংশ নেওয়া ৭১ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন যে, ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে সন্তানদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা অনেক বেশি কঠিন হবে।
তবে কিছু ক্ষেত্রে আশার আলোও দেখেছিলেন আমেরিকানরা। অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করতেন বর্ণবিদ্বেষ পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং চিকিৎসা সেবা আরও সহজলভ্য হবে, যদিও তারা মনে করেছিলেন এর ব্যয়ভার বহন করা কঠিন হবে।
২৭ বছর আগে গ্যালাপের জরিপে দেখা গিয়েছিল, ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষভাগে এসে সেই সন্তুষ্টির চিত্র নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ল্যান্ডফোনের বদলে বর্তমান আধুনিক জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন নাগরিকদের সন্তুষ্টির হার ৬০ শতাংশ থেকে নেমে মাত্র ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।