সন্তানকে সফল ও সুখী করতে চাইলে তাকে বাসার কাজ করতে দিতে হবে, বলছে গবেষণা
সন্তানকে সফল ও সুখী করতে চাইলে তাকে বাসার কাজ করতে দিতে হবে, বলছে গবেষণা
তবে শুধু কাজ করানোই যথেষ্ট নয়, বিষয়টা হলো, সেই কাজকে বৃহত্তর দায়িত্বের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা। যেমন, শুধু প্লেট তুলে রাখার দায়িত্ব দিলে হবে না, বরং বোঝাতে হবে তারা পরিবারের কাজ সহজ করতে সাহায্য করছে।
সন্তান মানুষ করা কঠিন। আর একইসাথে সন্তানকে সফল ও সুখী হিসেবে বড় করা ও নিজের ক্যারিয়ারে মন দেয়া সত্যিই কষ্টসাধ্য। তবে একটি সহজ উপায় আছে, যা সন্তানকে সফল, স্বাধীন ও সুখী করে তুলতে পারে, আর তা হলো, তাকে নিয়মিত বাসার কাজে যুক্ত করা।
শুধু কাজ নয়, দায়িত্ববোধের শিক্ষা
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদি একটি গবেষণায় (৮৬ বছর ধরে পরিচালিত) দেখা গেছে, যেসব শিশু ছোটবেলা থেকেই বাসার কাজ করেছে, তারা ভবিষ্যতে পেশাগত জীবনে অনেক বেশি সফল হয়েছে। গবেষকরা ৭০০ জন ‘সফল মানুষ’কে বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
তবে শুধু কাজ করানোই যথেষ্ট নয়—বিষয়টা হলো, সেই কাজকে বৃহত্তর দায়িত্বের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা। যেমন, শুধু প্লেট তুলে রাখার দায়িত্ব দিলে হবে না, বরং বোঝাতে হবে তারা পরিবারের কাজ সহজ করতে সাহায্য করছে। এতে শিশুরা পরিবারের অংশ হিসেবে , নিজেকে মূল্যবান ভাবতে শেখে।
কাজকে যদি এভাবে উপস্থাপন করা হয়, তাহলে শিশুর মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ গড়ে ওঠে। সে বুঝতে শেখে—সে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একজন। এতে করে তারা চারপাশের মানুষের প্রয়োজন ও সমস্যা সহজেই বুঝতে শেখে ও স্বেচ্ছায় সাহায্য করতে আগ্রহী হয়।
শিশুদের যদি এমনভাবে কাজ শেখানো হয় যেন তা পরিবার বা সমাজের একটি সম্মিলিত দায়িত্ব—তাহলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণ তাদের মধ্যে সহজেই তৈরি হয়:
- নিজেকে কেন্দ্র করে ভাবা কমে যায়। সব কিছু যদি অন্যরা করে দেয়, তাহলে সে অন্যের প্রয়োজনের কথা ভাববেই বা কেন?
- কাজের প্রতি মানসিকতা গড়ে ওঠে। সময় মেনে চলা, নিয়ম-শৃঙ্খলা—এসব জিনিস জন্মগত নয়, অভ্যাসে গড়ে ওঠে।
- ধৈর্য ও অধ্যবসায় শেখে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য জেদ আর ধৈর্য দরকার, আর সেটা চর্চায় তৈরি হয়।
- দলের সঙ্গে কাজ করার মানসিকতা তৈরি হয়। নেতৃত্ব দেওয়া, আবার প্রয়োজন হলে নেতৃত্ব মেনে চলা—দুই ধরনের গুণই আসে ঘরের কাজ শেখার মধ্য দিয়ে।
এই অভ্যাসগুলোই ভবিষ্যতে তাদের জীবন চালাতে, সময় বাঁচাতে, সমস্যা মোকাবিলা করতে এবং অন্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে চলতে সাহায্য করে। এটাই সফলতার এক চমৎকার সূত্র, আর মজার ব্যাপার হলো, এতে সুখও বাড়ে।
কাজের মাধ্যমে আসে আত্মবিশ্বাস ও আনন্দ
গবেষণা বলছে, যদি শিশুদের চার বা পাঁচ বছর বয়স থেকেই ছোট ছোট কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়—যেমন খেলনা গুছিয়ে রাখা, বই ঠিক জায়গায় রাখা—তাহলে তাদের আত্মবিশ্বাস ও নিজেদের ওপর আস্থা অনেক বেশি গড়ে ওঠে।
কারণ, নিজের কাজ শেষ করার মধ্যে একটা অর্জনের অনুভূতি থাকে। আর সেই অর্জনের জন্য যদি বাবা-মায়ের কাছ থেকে সামান্য প্রশংসাও পায়, সেটি শিশুর মনে অনেক বড় দাগ ফেলে।
যেসব শিশু নিয়মিত কাজ করে, তাদের সামাজিক ব্যবহার, লেখাপড়ার সক্ষমতা, বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং জীবনে সন্তুষ্টির মাত্রা—সব দিক থেকেই এগিয়ে থাকার প্রবণতা বেশি।
অন্যদিকে, যেসব শিশু কাজের সঙ্গে কম যুক্ত থাকে, তাদের এইগুলোর মাত্রা অনেক কম। এমনকি পরিবারে আয় বা বাবা-মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা যা-ই হোক, তবুও ছোটবেলায় কাজ শেখা শিশুরা পরে জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে থাকে।
আর যদি এসব কাজ একসঙ্গে করা হয়, পরিবারের সবাই মিলে—তাহলে সেই অভিজ্ঞতা আরও বেশি ইতিবাচক হয়।যদি বলা হয়, “তুমি প্লেটগুলো আনো, আমি ধুয়ে দিচ্ছি”—তাহলে ওদের কাজটা একটা বড় দায়িত্বের অংশ হয়ে যায়।
এভাবে পরিবারে কাজ ভাগ করে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠলে শিশুরা শেখে দলবদ্ধভাবে কাজ করতে, দায়িত্ব নিতে, অন্যকে সাহায্য করতে। ভবিষ্যতে এই অভ্যাসই তাদের জীবনে বড় কিছু অর্জনের ভিত্তি গড়ে দেয়। কারণ, সত্যি বলতে কি, জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অর্জন কখনোই একা করা যায় না।