sleep-
ছবি: নিউরোসায়েন্স নিউজ

সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এ রহস্যের সমাধান খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। একইসঙ্গে তারা দেখিয়েছেন, প্রচলিত ঘুমের ওষুধ এ প্রক্রিয়াকে দমিয়ে দিতে পারে। আর এ কারণেই ঘুমের ওষুধের প্রভাব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।

আমরা জীবনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময় ঘুমের মধ্যে কাটাই। তবে এই সময় শরীর নিস্তেজ থাকলেও আমাদের মস্তিষ্ক কিন্তু বসে থাকে না, বরং নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যায়। তার একটি হলো মস্তিষ্ক পরিষ্কার বা ব্রেইনওয়াশিং প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্লিমফ্যাটিক সিস্টেম নামের জটিল নেটওয়ার্ক মস্তিষ্ক থেকে বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণ করে। এর মধ্যে অ্যালজাইমারস এবং ডিমেনশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত অ্যামিলয়েড-বিটা ও টাউ প্রোটিনও রয়েছে।

স্নায়ুবিজ্ঞানী অধ্যাপক মাইকেন নেডারগার্ড জানান, ২০১২ সালে যখন তারা প্রথম এই ‘ব্রেইনওয়াশিং’-এর গুরুত্ব তুলে ধরেন, তখন এই প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে তা পুরোপুরি বোঝা সম্ভব হয়নি।

তবে সম্প্রতি একটি সাময়িকীতে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় তারা এ রহস্যের সমাধান খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। একইসঙ্গে তারা দেখিয়েছেন, প্রচলিত ঘুমের ওষুধ এ প্রক্রিয়াকে দমিয়ে দিতে পারে। আর এ কারণেই ঘুমের ওষুধের প্রভাব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।

প্রধান গবেষক নাটালি হগলুন্ড জানান, তাদের লক্ষ্য ছিল মস্তিষ্ক পরিষ্কার প্রক্রিয়ার ‘ব্ল্যাক হোল’ বা অজানা বিষয়টা খুঁজে বের করা।

যা খুঁজে পেয়েছেন সেটা নিয়ে স্নায়ুবিজ্ঞানী নেডারগার্ড বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে মনে করা হয়।’

গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের মস্তিষ্ক পর্যবেক্ষণ করেছেন। ঘুমন্ত ইঁদুরের মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ, তরলের গতি, রাসায়নিক মাত্রা ও বিভিন্ন সূচক পরিমাপ করে তারা দেখতে পেয়েছেন, পুরো প্রক্রিয়া শুরু হয় নরএপিনেফ্রিন নিঃসরণের মাধ্যমে। এই নিউরোট্রান্সমিটার সাধারণত ফাইট-অর-ফ্লাইট প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।

এটি ইঁদুরের মস্তিষ্কে ছোট ছোট জাগরণ (মাইক্রো-অ্যারাউজাল) সৃষ্টি করে এবং রক্তনালী সংকুচিত হয়। এর ফলে রক্তের পরিমাণ কমে গিয়ে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড প্রবাহের সুযোগ তৈরি হয়। যখন নরএপিনেফ্রিনের মাত্রা আবার কমে আসে, তখন রক্তনালী প্রসারিত হয়ে বর্জ্যযুক্ত তরলকে বাইরে ঠেলে দেয়।

এই সম্প্রসারণ ও সংকোচন প্রায় প্রতি ৫০ সেকেন্ডে একবার ঘটে, যা এক ধরনের পাম্পের মতো কাজ করে। এর ফলে গভীর ঘুমের সময় গ্লিমফ্যাটিক সিস্টেমে তরল প্রবাহ চলতে থাকে।

নেডারগার্ড বলেন, ‘মস্তিষ্কই একমাত্র অঙ্গ যা খুলি দ্বারা ঘেরা থাকে, তাই এর আয়তন নির্দিষ্ট। রক্তের পরিমাণ বাড়লে বা কমলে সেই অনুযায়ী সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডও নড়াচড়া করে এর মধ্যে।’

এই প্রক্রিয়াটি যদিও ইঁদুরের মস্তিষ্কে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, তবুও গবেষকরা বলছেন মানুষের মস্তিষ্কেও একই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ মানুষের মস্তিষ্কের কিছু গঠন ইঁদুরের সঙ্গে মিলে যায়।