লেজহীন প্রাণীর আনন্দের ভাষা বুঝবেন যেভাবে

কুকুর বা বিড়াল শুধু লেজ দিয়ে ভাব বিনিময় করে না; আবেগ প্রকাশের জন্য তাদের আরও অনেক উপায় আছে। সুতরাং, লেজহীন প্রাণীদের ক্ষেত্রে যোগাযোগের সেই অন্য মাধ্যমগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।

26 DEC WEB
পার্কে খেলছে এক ডোবারম্যান প্রজাতির কুকুর।ছবি: জেমসব্রে

পোষা প্রাণীর আচরণ বিশেষজ্ঞ, বিশেষ করে কুকুর ও বিড়াল নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের প্রায়ই একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়—লেজ না থাকলে বোঝা যাবে কীভাবে যে প্রাণীটি খুশি? এর উত্তর হলো, সব প্রাণীর ক্ষেত্রে লেজ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও, অনেকেই এটি শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যবহার করে। লেজ প্রানীদের শরীরের গঠনকৌশলের সঙ্গে যুক্ত এবং চলাফেরায় সাহায্য করে।

যেসব প্রাণীর সাধারণত লেজ থাকার কথা, তাদের লেজ না থাকার পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। এটি জন্মগত বা ‘কনজেনিটাল’ হতে পারে, অর্থাৎ জিনগত ত্রুটির কারণে প্রাণীটি লেজ ছাড়াই জন্মেছে। আবার ইচ্ছাকৃত জিনগত নির্বাচনের কারণেও হতে পারে। যেমন, ব্রিডাররা লেজহীন জাত তৈরি করেছেন—যেমন ফ্রেঞ্চ বুলডগ, বোস্টন টেরিয়ার এবং বিড়ালের কিছু জাত। আরেকটি কারণ হতে পারে চিকিৎসাগত সমস্যায় বা কেবল সৌন্দর্যের জন্য লেজ কেটে ফেলা (অ্যাম্পুটেশন)। তবে, সৌন্দর্যের জন্য এভাবে লেজ কাটা বেআইনি এবং প্রাণীর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

লেজ না থাকায় এই প্রাণীদের ওপর নানান প্রভাব পড়তে পারে। যেমন জীবনের কোন এক পর্যায়ে লেজ কেটে ফেলা হলে তা সারা জীবন দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কারণ হতে পারে। এছাড়াও লেজ না থাকার ফলে ভারসাম্য রক্ষায় প্রভাব পড়ে। যদিও তারা অন্য উপায়ে তা পুষিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তবে প্রধান প্রভাবটি পড়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে।

কুকুর বা বিড়াল শুধু লেজ দিয়ে ভাব বিনিময় করে না; আবেগ প্রকাশের জন্য তাদের আরও অনেক উপায় আছে। সুতরাং, লেজহীন প্রাণীদের ক্ষেত্রে যোগাযোগের সেই অন্য মাধ্যমগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।

এর মধ্যে রয়েছে মুখের ভঙ্গি, শরীরের অবস্থান এবং গলার স্বর। লেজহীন প্রাণী খুশি কি না, তা বুঝতে হলে তার মুখের অভিব্যক্তি ও শরীরের ভঙ্গির দিকে তাকাতে হবে। তবে এটি শুধু লেজহীন প্রাণীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। কুকুর লেজ নাড়লেই খুশি আর দুই পায়ের ফাঁকে লেজ গুটিয়ে রাখলেই ভয় পেয়েছে—এমনটা ভাবা ভুল।

প্রাণী যেকোনো আবেগ অনুভব করলে তা বিভিন্ন সংকেতের সংমিশ্রণে প্রকাশ পায়। উদাহরণস্বরূপ, আড়মোড়া ভাঙতে কুকুর হাই তুলতে পারে। আবার কোনো শিশু কাছে এলে অস্বস্তি থেকেও হাই তুলতে পারে। প্রাণীকে বুঝতে হলে যোগাযোগের এই ভিন্ন ভিন্ন রূপগুলো খেয়াল করতে হবে এবং প্রাণীটি কোন পরিস্থিতিতে আছে, তাও লক্ষ্য রাখতে হবে।

লেজহীন কুকুর খুশি কি না, তা বুঝতে তার শরীরের পেছনের অংশের দিকে তাকাতে হবে। লেজওয়ালা কুকুর খুশি হলে শিথিলভাবে লেজ নাড়ায়। লেজ না থাকলেও পেছনের অংশটি একইভাবে নড়বে। সাধারণত প্রানীটি যার সঙ্গে ভাব করতে চায় তার দিকে এগিয়ে যায়।

মুখের ভঙ্গিও দেখা যেতে পারে: খুশি থাকলে মুখটা আধা খোলা থাকবে, শ্বাস-প্রশ্বাস শান্ত হবে, কান চ্যাপ্টা না হয়ে স্বাভাবিক অবস্থানে থাকবে এবং চেহারা হবে শিথিল। কিছু কুকুর নিচু স্বরে (উচ্চৈঃস্বরে বা তীক্ষ্ণ নয়) ঘেউ ঘেউ করে বা ডাক দেয়। এ ছাড়া খেলার কিছু নির্দিষ্ট ভঙ্গিও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সামনের দুই পা ছড়িয়ে বুক মাটিতে লাগিয়ে পেছনের অংশ উঁচিয়ে রাখা খুবই সাধারণ একটি ভঙ্গি। এসবই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ।

বিড়ালের ক্ষেত্রে, অনেক সময় কুকুরের আচরণের সঙ্গে মিলিয়ে ভুল ধারণা তৈরি হয়। মনে করা হয়, লেজ এপাশ-ওপাশ করা মানেই ইতিবাচক আবেগ। কিন্তু বিড়ালের লেজের এই নড়াচড়া আসলে সম্পূর্ণ বিপরীত আবেগ প্রকাশ করে:  স্নায়ুবিক চাপ, অস্থিরতা এবং অস্বস্তি।

বিড়াল খুশি কি না তা বুঝতে লক্ষ্য করতে হবে তার শরীরের ভঙ্গি শিথিল কি না এবং সে আনন্দের ‘মিউ’ শব্দ করছে কি না। এই শব্দ সাধারণত ছোট ও তীক্ষ্ণ স্বরের হয়। খুশি হলে বিড়াল প্রায়ই কাছে এসে মানুষ বা অন্য প্রাণীর পায়ে গা ঘষে। অনেক সময় তারা মাটিতে ধপাস করে শুয়ে পড়ে পেট দেখিয়ে দেয়।

এর মানে এই নয় যে সে আদর চাইছে; বরং এর মাধ্যমে সে বোঝায় যে আপনার সঙ্গে সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। গড়গড় শব্দ করাও আনন্দের লক্ষণ। আবার যখন তারা মানুষের কোলে বা গায়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকে, তার মানে তারা আরামে আছে ও খুশি, মোটেও ভীত নয়।