নারী শিক্ষা এগিয়ে নিতে যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন খালেদা জিয়া

এই উপবৃত্তির পদ্ধতিকে বিশ্বের অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। বাংলাদেশ এটি কীভাবে করবে, এটি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু, পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংকের মতো বড় সংস্থা এটিকে ‘মডেল’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

rhy
রাশেদা কে চৌধুরী। টিবিএস স্কেচ

নারী শিক্ষার উন্নয়নে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে অবদান, তা বাংলাদেশ যুগে যুগে স্মরণ রাখবে। তিনি প্রথম চিন্তা করেছিলেন মেয়েদের জন্য উপবৃত্তি দেওয়ার। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সেই উপবৃত্তি পরবর্তীতে ধাপে ধাপে একদম বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন এবং যা একেবারেই ‘যুগান্তকারী’ সিদ্ধান্ত।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এ কাজটি পরবর্তী সরকারগুলো এসেও চালু রাখে। খালেদা জিয়ার অনেক নীতি, অনেক কৌশল ফেলে দিয়েছে পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে। খালেদা জিয়ার এটা কিন্তু তারা ফেলতে পারেনি। এটি নারী শিক্ষার্থীর অগ্রসরের পথ তৈরি করে দিয়েছে এবং পরবর্তীতে নারীকে আরো এগিয়ে এনেছে। তিনি যে উপবৃত্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, সেটি বাংলাদেশের নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনে আনে, নিশ্চয় সেটাকে ‘রেভ্যুলেশনারি’ বললেও কম বলা হবে। এখন এটা পৃথিবীর সর্বত্র মডেল হিসাবে দাঁড়িয়েছে। তৃতীয় বিশ্বে নারীশিক্ষার মডেল হিসেবে এটি স্বীকৃত।

এই উপবৃত্তির পদ্ধতিকে বিশ্বের অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। বাংলাদেশ এটি কীভাবে করবে, এটি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু, পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংকের মতো বড় সংস্থা এটিকে ‘মডেল’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আমি নারী শিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত থাকার সুবাদে এসব ভালো করে জানি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যখন নারী শিক্ষার্থীদের এই উপবৃত্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন বিশ্বব্যাংকও এই উদ্যোগকে ভালো নজরে দেখেনি যে উপবৃত্তিটা সম্পূর্ণভাবে সরকারি খরচে, কোনো বিদেশী অনুদান ছাড়া। তিনি নিজে করেছেন সাহস করে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। সেটা তার অবিস্মরণীয় কীর্তি, সেটার ফসল এখন আমরা ঘুরে তুলছি। খালেদা জিয়ার এই উদ্যোগ শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে।

এটা পৃথিবীব্যাপী গবেষণায় স্বীকৃত, একজন নারী যদি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়তে পারে তাহলে তার সন্তান কখনো নিরক্ষর হয় না, অপুষ্টিতে ভুগবে না, এটা ইউএনএফপির গবেষণা। সেই জায়গা থেকে আমরা দেখতে পেয়েছি যে নারী শিক্ষায় তার অবদান, সেটার ফলশ্রুতি আজকের বাংলাদেশে গার্মেন্টস থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষিকাজ সবকিছুতেই নারী এগিয়ে গিয়েছে। এটা কিন্ত সরাসরি খালেদা জিয়ার উপবৃত্তি প্রকল্প আর অবৈতনিক শিক্ষার ফসল।

আমরা যদি বিবেচনা করি, তার এই প্রজ্ঞাটা বাংলাদেশকে কত দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে, আশা করি নতুন প্রজন্ম সেটি মনে রাখবে।

নারীর ক্ষমতায়ন বললে, প্রথম বলতে হয় যে কথাটা, ‘ফ্রম দ্য ডে অফ দ্য হাউস, শি রোজ টু দ্য লিডার অব অফ দ্য পার্লামেন্টে’। সেই জায়গায় যখন গেছেন তিনি, তিনি নিজে তো প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছেন। এবং তার পথ ধরে অনেক নারী রাজনীতিতে এগিয়ে এসেছেন।

নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন খুবই জরুরি। সব ক্ষমতায়নের মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণ সবকিছুর মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এমন একটা ইন্ডিকেটর—যেটার মাধ্যমে নারী নিজের পথ খুঁজে পায়। তার মানে সমাজে নারীর অবস্থান বাড়ে। ওই জায়গায় কিন্তু খালেদা জিয়া রোল মডেল হয়ে উঠেছেন।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সিলেটে আমার একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঘটনার উদাহরণ দিয়ে বলি, সিলেটের অজপাড়া গ্রামে একটি মেয়ে ক্লাস ফোরে পড়াশুনা করে। মেয়েটাকে পড়াশুনার পাশাপাশি কাজও করে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম বড় হয়ে কী হতে চাও। যে সরাসরি উত্তরে বলে ‘প্রধানমন্ত্রী’। আমি হেসে ফেলেছিলাম এবং বললাম যে, হতে পারবে? উত্তরে মেয়েটি বলে কেন, খালেদা জিয়া যদি হতে পারেন আমি পারব না কেন? 

এই যে প্রাথমিকের একজন শিক্ষার্থীকেও তিনি উজ্জীবিত করেছেন। এই যে রোল মডেল, আমরা কিন্তু বলি রোল মডেল মানে এটাই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। ‘পিপল উইল ফলো’ – সেটাই তো হয়েছে খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে।


রাশেদা কে চৌধুরী: গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা


শ্রুতিলিখন: রেজাউল করিম